কিডনি ক্যান্সার
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কিডনি বা বৃক্ক হলো শিমের আকারের এক জোড়া অঙ্গ যা অবস্থান অনুযায়ী মানবদেহের মেরুদন্ডের দুই পাশে, পাঁজরের নিচে ও উদরের পেছনের অংশে বিদ্যমান। কিডনি বা বৃক্কের প্রধান কাজ রক্ত পরিশোধন বা ফিল্টার করা। প্লাজমা প্রোটিন ধরে রাখার সময় ক্রিয়েটিনিনের মতো অতিরিক্ত শারীরিক তরল, লবণ এবং বিপাকীয় উপকরণগুলি দূর করার জন্য এ রক্ত পরিশোধনের বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ। কিডনিতে যে ক্যান্সারের উৎপত্তি হয় তাকে কিডনির ক্যান্সার বলে। সবচেয়ে বেশি তৈরি হওয়া কিডনি ক্যান্সার হলো রেনাল সেল অ্যাডেনোকার্সিনোমা যা দুই রকমের হতে পারে- পরিষ্কার/ক্লিয়ার সেল রেনাল সেল কার্সিনোমা বা নন-ক্লিয়ার সেল রেনাল সেল কার্সিনোমা। ক্লিয়ার সেল রেনাল সেল কার্সিনোমার ক্ষেত্রে কোন কালচারে পরিষ্কার বা ফ্যাকাশে কোষ দেখা যায়। ক্রোমোফোব রেনাল সেল কার্সিনোমাও পরিষ্কার বিবর্ণ কোষগুলির মতো ফ্যাকাশে, তবে আকারে অনেক বড়। প্যাপিলারি রেনাল সেল কার্সিনোমার ক্ষেত্রে ছোট আঙুলের মতো অভিক্ষেপ তৈরি হয় (যাকে প্যাপিলি বলা হয়) এবং তারা নির্দিষ্ট কিছু রঞ্জকের বর্ণ শোষণ করায় মাইক্রোস্কোপের নীচে পর্যবেক্ষণ করলে গোলাপী দেখায়।
 
প্রধান কারণ
কিডনি ক্যান্সারের মূল কারণটি ভালোভাবে বোঝা না গেলেও এমন বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ধূমপান, স্থুলতা এবং উচ্চ রক্তচাপ এ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার পেছনে বেশি দায়ী।
 
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কিডনি ক্যান্সারের পর্যায়গুলো সাধারণত প্রথম থেকে চতুর্থ পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়। প্রথম দুই পর্যায়ে ক্যান্সারগুলো শ্রেণিবদ্ধ করা হয় তাদের টিউমারের আকারের ভিত্তিতে, যেখানে প্রথমটি ৭ সেন্টিমিটারের চেয়ে কম ও দ্বিতীয়টি ৭ সেন্টিমিটারের বেশি এবং টিউমারগুলো যাতে লসিকাগ্ৰন্থি বা দেহের দূরবর্তী অংশগুলিতে ছড়িয়ে না থাকে। তৃতীয় পর্যায়ের কিডনি ক্যান্সার যে কোনও আকারের হতে পারে এবং লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্ৰন্থিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তবে শরীরের দূরবর্তী অংশগুলোতে নয়। চতুর্থ পর্যায়ের ক্যান্সারগুলো কিডনির উপরে অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে বা লসিকাগ্ৰন্থি এবং শরীরের দূরবর্তী অংশে ছড়িয়ে পড়ে। মেটাস্ট্যাটিক রেনাল সেল কার্সিনোমা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে পর্যায়করণ ছাড়াও ফলাফল এবং চিকিৎসা পদ্ধতি বিবেচনায় আরো কিছু বিষয় পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রক্তের ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজেনেস স্তর, রক্তের ক্যালসিয়াম স্তর, লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং নিউট্রোফিল সংখ্যার মোট গণনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
 
লক্ষণ
কোনো কারণের জন্য যখন ইমেজিং পরীক্ষা করা হয় তখন প্রায়ই দুর্ঘটনাবশত কিডনি বা রেনাল ক্যান্সার ধরা পড়ে। রেনাল ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ হলো প্রস্রাবের সাথে নির্গত রক্ত। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে শরীরের পাশ এবং পিছনে ব্যথা এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যাওয়া অন্তর্ভুক্ত। কিডনির ক্যান্সার রক্তের ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজেনেসের স্তর এবং রক্তের ক্যালসিয়ামের স্তরকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতার কারণ হতে পারে যা রক্তের লোহিত বা লাল কণিকার সংখ্যা হ্রাস দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও এই ক্যান্সার শ্বেত রক্তকণিকা এবং নিউট্রোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
 
সাধারণ চিকিৎসা পরিকল্পনা
কিডনির ক্যান্সার চিকিৎসার পরিকল্পনা স্থানীয় বা সমগ্র শরীরে পদ্ধতিগত ভাবে হতে পারে। স্থানীয় বা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ, এ ধরনের চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে শল্য চিকিৎসা, বিসারণ, বিকিরণ বা সক্রিয় নজরদারি অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় নয় বরং পদ্ধতিগতভাবে হওয়া চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাধারণত, চিকিৎসার পরিকল্পনাগুলো ক্যান্সারের স্টেজিং বা চিহ্নিতকরণ, রোগীর বয়স এবং স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। কিডনিতে ছোট টিউমারযুক্ত রোগীদের মধ্যে সক্রিয় নজরদারি অনুসরণ করা হয়। টিউমারটি সিটি (কম্পিউটারের সাহায্যে টমোগ্ৰাফি) বা আল্ট্রাসাউন্ডের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এটি আকারে বৃদ্ধি পেলে চিকিৎসা করা হয়। রেনাল ক্যান্সারের প্রথম তিন পর্যায়ে সাধারণত যখন সম্ভব হয় তখন শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে একটি অংশ (আংশিক নেফ্রেকটমি) বা পুরো কিডনি (র‌্যাডিকাল নেফ্রেকটমি) অপসারণ অন্তর্ভুক্ত। যখন তৃতীয় পর্যায়ের ক্যান্সারগুলি সম্পূর্ণরূপে শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে মুছে ফেলা যায় না বা বিকিরণের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় না, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত থেরাপির ওষুধ দিয়ে বা ইমিউনোথেরাপির সংমিশ্রণে চিকিৎসা করা যেতে পারে। চতুর্থ পর্যায়ের রেনাল ক্যান্সার, যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো নিরাময় করা কঠিন হলেও অস্ত্রোপচার বা বিকিরণ (রেডিয়েশন) থেরাপির সাহায্যে অন্য কোনো জায়গায় ব্যথা বা মেটাস্টেসিসের অন্যান্য লক্ষণগুলো হ্রাস করতে সহায়তা করা যায়।
 
পুষ্টিকর পরিপূরক
কিডনির ক্যান্সারের জন্য বিশেষভাবে কোনো পুষ্টিকর পরিপূরকের পরামর্শ দেয়া হয় না। কিছু প্রমাণ রয়েছে যে ডোকোসাহেক্সানইক এসিড (ডিএইচএ), সাধারণত মাছ  এবং মাছের তেলের পরিপূরক খাবারগুলোয় পাওয়া যায় এমন একটি ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যান্সার প্রতিরোধের থেরাপির সাথে মিলিত হয়ে রেনাল বা বৃক্কীয় কোষের কার্সিনোমার আক্রমণাত্মকতা, বৃদ্ধির হার এবং রক্তনালী বৃদ্ধির মাত্রা হ্রাস করে [১]। ক্যান্সার থেরাপির সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও মিথস্ক্রিয়া এড়াতে নিজস্ব ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের সাথে কথা না বলে কোনও উচ্চ মাত্রার ভিটামিন বা পুষ্টিকর পরিপূরক পদ্ধতি শুরু করা উচিত নয়।
 
তথ্যসূত্র:
১. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4873345/
 

Fighting Cancer Desk
ফাইটিং ক্যান্সার ডেস্ক