জরায়ুর ক্যান্সার কি?
জরায়ু বা গর্ভাশয় দেখতে অনেকটা নাশপাতি সদৃশ যা নারীদেহে পেলভিসে মূত্রাশয় ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত থাকে। গর্ভধারণের পরে একটি শিশু জরায়ুতে বেড়ে উঠে। জরায়ুতে সার্ভিক্স বা জরায়ুমুখ, ইসমাস ও ফান্ডাস থাকে যা উপরের দিকে ডোম-সদৃশ অংশ গঠন করে। জরায়ুতে তিনটি আবরণী থাকে যা হলোঃ এন্ডোমেট্রিয়াম (ভেতরের আবরণী, মায়োমেট্রিয়াম (এটি প্রশস্থ একটি আবরণী যার পুরোটাই পেশী দ্বারা তৈরি) এবং সেরোসা (জরায়ুর বাইরের দিকের পাতলা আবরণী)। জরায়ুর ক্যান্সার এন্ডোমেট্রিয়াল আবরণীতে হয়ে থাকে এবং নারীদের জননতন্ত্রের সর্বাপেক্ষা সংক্রমিত ক্যান্সার এটি। ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে মেনোপজের পরেই সাধারণত এই ক্যান্সার হয়ে থাকে।  বিভিন্ন ধরনের জরায়ুর ক্যান্সারে মধ্যে রয়েছেঃ এন্ডোমেট্রয়েড, অ্যাডিনোকারসিনোমা, সেরাস অ্যাডিনোকারসিনোমা, অ্যাডিনো স্কোয়ামাস কারসিনোমা এবং কারসিনোমা সারকোমা।
 
পরিসংখ্যানঃ 
প্রায় ৬৫,৬২০ জন নারী জরায়ু বা এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে আক্রান্ত। যে ধরনের ক্যান্সারগুলোতে নারীরা আক্রান্ত হয়ে থাকে তার মধ্যে এটি চতুর্থতম দায়ী কারণ। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় ৫ বছর অবধি বেঁচে ছিল এমন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৮১%।
 
ঝুঁকির কারণ এবং লক্ষণসমূহঃ
জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকির প্রধাণ কারণগুলো হচ্ছে বয়স (৫০ এবং ৬০), অল্প বয়সে মাসিক হওয়া (১২ বছর), দেরিতে মেনোপজ হওয়া, সন্তান জন্ম দেন নি এমন কেউ, পরিবারে কারো বন্ধ্যাত্ব থাকলে (গর্ভধারণের অক্ষমতা), ডিম্বাশয়ের রোগ যেমন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম যার ফলে দেহে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অধিক ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং  নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয়, রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া (ডায়াবেটিস), উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), ইতোপূর্বে পরিবারে কারো এন্ডোমেট্রিয়াল কারসিনোমা হয়ে থাকলে, বংশগতভাবে ননপলিপোসিস কোলোরেকটাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে,মেনোপজের পর ট্যামোক্সিফেন ঔষধ সেবন করলে এবং কিছু হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি)।
লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক মূত্রত্যাগ না হওয়া, মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, সহবাসের সময় ব্যথা, শ্রোণিদেশে ব্যথা (সাধারণত এটি ক্যান্সারের শেষ ধাপের লক্ষণ), কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া (সাধারণত এটি ক্যান্সারের শেষ ধাপের লক্ষণ)। 
 
প্রতিকারঃ
প্রতিবছর নিয়মিত চেকআপ করানো, যোনীপথ থেকে অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হলে অতিসত্ত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের খাটুনি হয় এমন কাজ করা, অপেক্ষাকৃত কম চর্বি-জাতীয় খাবার খাওয়া। এগুলো মেনে চললে জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিকারে সহায়তা হবে। 
 
চিকিৎসাঃ
বর্তমানে যে ধরনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে সেগুলো হল সার্জারি (হিস্টেরেক্টমি), কেমোথেরাপি, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি (ইনটেনসিটি মডিউলেটেড রেডিয়েশন থেরাপি, ব্র্যাকাইথেরাপি। 

Fighting Cancer Desk
ফাইটিং ক্যান্সার ডেস্ক