মূত্রাশয়ের ক্যান্সার

মূত্রাশয়ের ভেতরের আবরণী কোষে মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের শুরু হয়ে থাকে। সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে তার মধ্যে এটি পঞ্চমতম দায়ী কারণ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে চতুর্থতম দায়ী কারণ। মূত্রাশয়ের আবরণী ইউরোথেলিয়াল কোষ সাধারণত এর জন্য দায়ী, এই কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা টিউমারে পরিণত হয়।

বেশিরভাগ ইউরেথেলিয়াল কারসিনোমা পেশীকে আক্রমণ করে না এবং মূত্রাশয়ের অভ্যন্তরীণ আবরণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আরো কয়েক ধরনের কারসিনোমা রয়েছে যেগুলোতে মানুষ খুব একটা আক্রান্ত হয় না, যেমন স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা, অ্যাডিনো কারসিনোমা এবং স্মল সেল কারসিনোমা। এই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে দীর্ঘদিন ধরে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা বেদনা হতে থাকে। বিনাইন মূত্রাশয়ের টিউমার খুবই বিরল। এই ধরনের ক্যান্সারে সাধারণত ৭০ ঊর্ধ্ব প্রবীণ ব্যক্তি এবং পুরুষরা আক্রান্ত হয়ে থাকে।

পরিসংখ্যান
মূত্রাশয়ের ক্যান্সারে প্রায় ৮৩,৭৩০ জন (পুরুষ ৬৪,২৮০ জন এবং নারী ১৯,৪৫০ জন) প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের তুলনায় শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় ব্যক্তিদের গড় বয়স ৭৩ বছর। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৭,২০০ জন (পুরুষ ১২,২৬০ জন এবং নারী ৪,৯৪০ জন) ব্যক্তি মারা গেছে। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় ৫ বছর অবধি বেঁচে ছিল এমন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৭৭%।

ঝুঁকির কারণ এবং লক্ষণসমূহ

ঝুঁকির কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে-

  • লিঙ্গ (পুরুষ)
  • বয়স (৬৫ এর অধিক)
  • তামাক সেবন
  • বর্ণ (শ্বেত বর্ণ)
  • রাসায়নিক( টেক্সটাইল, রাবার, চামড়া, কাপড়ের রং, ঘরবাড়ির রং এবং প্রিন্ট শিল্প; প্রকৃতিতে উপস্থিত কিছু রাসায়নিক; এবং অ্যারোমেটিক অ্যামাইন নামক কেমিক্যাল)
  • দীর্ঘদিন ধরে মূত্রাশয়ের সমস্যায় ভুগতে থাকলে
  • সাইক্লোফসফেমাইডের ব্যবহার
  • পায়োগ্লাইটাজোনের (অ্যাক্টস) ব্যবহার
  • পূর্বে এমন হয়ে থাকলে
  • স্কিস্টোসোমিয়াসিস
  • লিঞ্চ সিনড্রোম ও অন্যান্য জেনেটিক সিনড্রোম
  • আর্সেনিকের সংস্পর্শে আসা

লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রসাবের সাথে রক্ত বা জমাট বাঁধা রক্ত যাওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভব করা, ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ, শরীরের নিম্নভাগে পশ্চাৎদেশে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস পাওয়া, রাতে বার বার মূত্র ত্যাগের বেগ অনুভব করা, মূত্র ত্যাগের বেগ অনুভব করা কিন্তু প্রস্রাব না হওয়া, অবসাদ এবং শরীরের এক পাশে নিম্নভাগে মেরুদন্ডে ব্যথা। 

প্রতিকার
ধূমপান থেকে বিরত থাকা, রাসায়নিকের সংস্পর্শে কম আসা, ঝুঁকির কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে নিয়মিত চেকআপ করা। 

চিকিৎসা
চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সার্জারি(ট্রান্সইউরেথ্রাল ব্লাডার টিউমার রিসেকশন (টিইউআরবিটি), র‍্যাডিকেল সিসটেক্টমি ও লিম্ফনোড ডিসেকশন, ইউরিনারি ডাইভারশন), টার্গেটেড থেরাপি (এরডাফিটিনিব (ব্যালভার্সা), এনফরটুমাব, ভেডোটিন-ইজেএফভি (প্যাডসেভ), কেমোথেরাপি (ইন্ট্রাভেসিক্যাল কেমোথেরাপি, সিস্টেমিক কেমোথেরাপি), ইমিউনোথেরাপি (ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুয়েরিন (বিসিজি), ইন্টারফেরন (রফেরন-এ, ইন্ট্রোন এ, আলফেরন), ইমিউন চেকপয়েন্ট ইনহিবিটরস), রেডিয়েশন থেরাপি। 


Fighting Cancer Desk
ফাইটিং ক্যান্সার ডেস্ক