সংক্ষিপ্ত বিবরণ
স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের প্রধান অংশগুলোর একটি হলো ডিম্বাশয়/গর্ভাশয় যা ইংরেজিতে ওভারি নামেই বেশি ব্যবহৃত হয়। এই ডিম্বাশয়েই ডিম্বাণু বা ওভাম তৈরি হয় যা পরবর্তীতে ফ্যালোপিয়ান নালীর মাধ্যমে জরায়ুতে পৌঁছে এবং শুক্রাণুর উপস্থিতিতে নিষিক্ত হয়ে প্রজনন ঘটায়। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এখানে টিউমার কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ প্রক্রিয়া ডিম্বাশয় বা ফ্যালোপিয়ান নালীর থেকেও শুরু হতে পারে। ডিম্বাশয় তিন ধরণের কোষ দ্বারা গঠিত এবং প্রতিটি ধরণের কোষ থেকে বিভিন্ন ধরণের টিউমার সৃষ্টি হতে পারে। এপিথেলিয়াল ডিম্বাশয়ের টিউমারগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এগুলো ডিম্বাশয়ের বাইরের পৃষ্ঠকে আবৃত করে রাখা কোষগুলো থেকে তৈরি হওয়া শুরু করে। এর ধরণ মৃদু, বর্ডার লাইন বা নির্দিষ্ট সীমারেখা এবং মারাত্মক হতে পারে। উচ্চ পর্যায়ের সিরাস (সিরাম প্রস্তুতকারী কোষ) কার্সিনোমা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের সবচেয়ে মারাত্মক রূপ। অন্যান্য ধরণের মধ্যে রয়েছে স্পষ্ট কোষের (ক্লিয়ার সেল) ডিম্বাশয় কার্সিনোমা, শ্লৈষ্মিক ডিম্বাশয় কার্সিনোমা এবং এন্ডোমেট্রয়েড ডিম্বাশয় কার্সিনোমা।
ডিম্বাশয়ের জীবাণু কোষের টিউমারগুলো ডিম্বাণু উৎপাদনকারী কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এরকম জীবাণু কোষের টিউমারগুলোর মধ্যে টেরাটোমাস, ডিসজারমিনোমাস, এন্ডোডার্মাল সাইনাস টিউমার এবং কোরিওকারসিনোমা উল্লেখযোগ্য। ওভারি বা ডিম্বাশয়ের জীবাণু কোষের টিউমারগুলো একটির বেশি উপপ্রকারের সংমিশ্রণ হতে পারে। স্ট্রোমাল টিউমারগুলোর উৎপত্তি হয় স্ট্রাকচারাল বা গাঠনিক টিস্যু কোষ থেকে যা ডিম্বাশয়কে একসাথে ধরে রাখে। এরা স্ত্রী হরমোন এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এবং কিছু ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের মতো পুরুষ হরমোন তৈরি করতে পারে। ডিম্বাশয়ের স্ট্রোমাল টিউমার গুলোর মারাত্মক পর্যায়ের মধ্যে গ্র্যানুলোসা কোষ টিউমার, গ্র্যানুলোসা-থেকা টিউমার এবং সার্টোলি-লেডিগ কোষের টিউমার অন্তর্ভুক্ত থাকে।
প্রধান কারণ
ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের মূল কারণটি ভালোভাবে বোঝা যায় না গেলেও ধারণা করা হয় মেনোপজের পরে বয়স বাড়তে থাকা, স্থুলতা এবং হরমোন থেরাপি ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের সাথে জিনগত সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়।পারিবারিক ইতিহাসে ডিম্বাশয়ের, স্তন বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঘটনা থাকলে তা অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
টিউমার কোষগুলোর সাথে সাধারণ টিস্যুর বৈশিষ্ট্যের মিলের ভিত্তিতে প্রতিটি ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারকে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীভুক্ত করা হয়। প্রথম পর্যায়ের ডিম্বাশয় কারসিনোমা সাধারণ টিস্যুর মতো দেখতে এবং এই সময়ে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের মাঝারিভাবে পৃথককৃত ও তুলনামূলকভাবে কম পৃথককৃত ডিম্বাশয় কার্সিনোমাস দেখতে সাধারণ টিস্যুর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন এবং দেহে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া সাধারণত জটিল হয় বলে এটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সবকিছু ভালোভাবে বুঝার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে বিস্তারিত কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্যান্সার চিহ্নিতকরণের বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট পর্যায় রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, উচ্চ পর্যায়ে টিউমারের আকার বড় হতে থাকে বা লসিকাগ্ৰন্থি ও অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের পর্যায় গুলো ও চিহ্নিতকরণ সম্পর্কিত আরো তথ্য এখানে পাওয়া যাবে: https://www.cancer.org/cancer/ovarian-cancer/detection-diagnosis-stasing/stasing.html।
লক্ষণ
উচ্চতর ভয়াবহ পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে খুব কম সময়ই লক্ষণ দেখা যায়। মেনোপজের পরে বর্ধিত ডিম্বাশয় এ ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। প্রথম লক্ষণ হিসেবে বদহজমের মতো তলপেটে অস্পষ্ট অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে পেট বা তলপেট ফুলে যাওয়া, ক্ষুধা হ্রাস, গ্যাস এবং পিছনে ব্যথা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে পেট ফোলা এবং শ্রোণী অঞ্চলে ব্যথা হতে পারে, রক্তস্বল্পতা এবং অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস ও দেখা যায়। স্ট্রোমাল সেল ওভারিয়ান ক্যান্সারগুলো এস্ট্রোজেন তৈরি করতে পারে যা জরায়ুর আস্তরণের অত্যধিক বৃদ্ধি এবং স্তনের আকারের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। কিছু স্ট্রোমাল সেল ওভারিয়ান ক্যান্সার টেস্টোস্টেরন তৈরি করতে পারে যা শরীরে অতিরিক্ত চুল বা লোমের উদ্ভবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাধারণ চিকিৎসা পরিকল্পনা
ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার চিকিৎসার পরিকল্পনা স্থানীয় বা পদ্ধতিগত হতে পারে। স্থানীয় চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে শল্য চিকিৎসা (অস্ত্রপচার) বা রেডিয়েশন থেরাপি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পদ্ধতিগত চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং হরমোন থেরাপি রয়েছে। সাধারণত চিকিৎসার পরিকল্পনাগুলো নির্দিষ্ট চিহ্নিতকরণের পর্যায়, শ্রেণী এবং যে কোষগুলো থেকে ডিম্বাশয় ক্যান্সার সৃষ্টি হয় সেগুলোর ধরণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। ক্যান্সার যদি উভয় ডিম্বাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং উর্বরতা বা প্রজনন সংরক্ষণ করা কোনো উদ্বেগের বিষয় না হয় তবে উভয় ডিম্বাশয়, উভয় ফ্যালোপিয়ান নালীর এবং জরায়ু অপসারণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
পুষ্টিকর পরিপূরক
ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তাবিত কোনো পুষ্টিকর পরিপূরক নেই। থেরাপি চলাকালীন সময়ে সঠিক পুষ্টি বজায় রাখার লক্ষ্য হলো শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শরীরের যথাযথ পুষ্টি ও ক্যালোরির চাহিদা পূরণ করা। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের সেরে ওঠার ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস কোনো প্রভাব রাখে কিনা সেই বিষয়ে খুব সীমিত তথ্য পাওয়া যায়। বেশি পরিমাণে ফল ও শাক-সবজি, ভিটামিন-ই এবং সবুজ চা (গ্ৰিন টি) থেকে সম্ভাব্য উপকারী ফলাফলের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।