প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ :৫২

কোন কারণগুলো ক্যান্সারকে এমন অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে?

ক্যান্সার একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতা যা বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ ও পরিবারকে বিপন্ন করে তুলেছে। এই রোগটি নিঃসন্দেহে জটিল ও রহস্যজনক এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সত্ত্বেও কেন যেন এই রোগ সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। “কিন্তু কেন?” এই জটিল প্রশ্নের বিশদ আকারে উত্তর জানা প্রয়োজন।

 

জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

আপনি কী জানেন আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রার ধরনের কারণে দিনেদিনে শারীরিক পরিশ্রম কমে যাচ্ছে? অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে এবং প্রতিনিয়ত নানা ধরনের ক্ষতিকারক বস্তুর সংস্পর্শে আসার কারণে আমাদের স্থূলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও মেটাবলিক ডিজঅর্ডার দেখা দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাগে, এই দুটো বিষয়ই ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

পরিবেশগত কারণ:

শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে পৃথিবীতে রেকর্ড পরিমাণ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এখন। আমরা নিঃশ্বাসের সাথে যে বাতাস গ্রহণ করছি, যে পানি পান করছি এবং যে খাবার খাচ্ছি তার প্রায় সবই নানা রকম ক্ষতিকারক পদার্থ দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এই ক্ষতিকর দূষিত পদার্থের কারণে ক্যান্সারের  মতো নানা রকম জটিল শারীরিক রোগ দেখা দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমাদের শরীর তামাকজাত দ্রব্য থেকে নির্গত ধোঁয়া, বায়ুদূষণ ও কীটনাশকের মতো বিভিন্ন পরিবেশগত কার্সিনোজেনগুলোর সংস্পর্শে আসছে। এই সব দূষিত পদার্থগুলোর সমন্বয়ে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে।

 

জিনগত সংবেদনশীলতা:

ক্যান্সার সংক্রমণের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ধরন ও পরিবেশগত কারণের পাশাপাশি জিনগত কারণ একটি ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে মিউটেশনের ফলে একজন ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। শুধু সংবেদনশীলতার কারণেই ক্যান্সার হয় না। পরিবেশগত ও জীবনযাত্রার বিষয়গুলো জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং ঝুঁকির কারণ সৃষ্টি করে।

 

বয়স:

মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়তে থাকে। জেনেটিক মিউটেশন ও বয়সের সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ ‘বয়স বৃদ্ধি’ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যত দিন যাবে মানুষের বয়স বাড়ার সাথে ক্যান্সার আক্রান্তের হারও হয়তো বাড়তে থাকবে।

 

ভৌগলিক অবস্থানগত ও রোগের ধরনের পরিবর্তন:

বিভিন্ন ধরনের বিষয়, যেমন সংস্কৃতি, ধর্ম ও জীবনযাত্রার ধরন ক্যান্সারের প্রকোপকে প্রভাবিত করে থাকে। বিশ্বায়ন, শহরায়ন এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারের উপস্থিতি ও ব্যাপকতা এতো বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বিশেষভাবে কোনো পরিবেশগত বা জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্যের কারণে  নির্দিষ্ট কোনো ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।

 

তামাক ও অ্যালকোহল সেবন:

তামাক সেবন ও অতিরিক্ত মদ্যপান ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অনেক বড় ঝুঁকির কারণ। নিকোটিনের মাদকতা ও অ্যালকোহলের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে এগুলো সেবনের মাত্রা দিনদিন বেড়ে চলেছে।

 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা:

ক্যান্সার গবেষণা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গিয়েছে কিন্তু প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে। ক্যান্সার ভীষণ জটিল ও বহুরূপী একটি রোগ। ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও টার্গেট থেরাপি নির্ধারণ বা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পদক্ষেপ, প্রতিটি রোগীর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং ক্যান্সারের বায়োলজি গভীরভাবে অনুধাবন করা জরুরী। 

 

তথ্যসূত্র:

https://cytecare.com/blog/medical-oncology/why-cancer-cases-are-on-the-rise/
https://www.cancercenter.com/community/blog/2023/01/why-are-cancer-rates-rising-in-adults-under-50
https://news.cancerresearchuk.org/2015/02/04/why-are-cancer-rates-increasing/
https://www.hindustantimes.com/lifestyle/health/top-reasons-why-cancer-cases-are-on-rise-how-to-reduce-risk-101700312782119.html#:~:text=This%20appears%20to%20be%20due,early%20when%20it%20is%20curable.


Fighting Cancer Desk
ফাইটিং ক্যান্সার ডেস্ক