আমাদের রেচনতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মূত্রাশয়। এখানেই মূত্র জমা হয় এবং এটি রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। ক্যান্সার আক্রান্তের ফলে মূত্রাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
মূত্রাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে কিছু মারাত্মক লক্ষণ দেখা যায়-
- মূত্রাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে প্রায়শ যে লক্ষণ দেখা যায় তা হলো প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় হেমাটুরিয়া। কখনো রক্তে সামান্য পরিমাণে রক্তের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে এবং প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক হতে পারে। আবার কখনো প্রস্রাবে রক্তের পরিমাণ বেশি হতে পারে এবং প্রস্রাবের রং কমলা, গোলাপী বা কালচে লাল হতে পারে।
ব্যাপারটা এমন নয় যে প্রতিদিনই প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি থাকবে। হয়তো আজকে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাচ্ছে, আগামীকাল এমনটা নাও হতে পারে। হয়তো কিছুদিন পরে বা এক সপ্তাহ পরে আবার এমনটা হতে পারে তবে অবশ্যই পুনরায় এই সমস্যা দেখা দিবে। প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলেও কারো কারো ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে আবার অনেকের ক্ষেত্রে কোনো ব্যথা হয় না। - প্রস্রাবের আগে, প্রস্রাবকালীন বা পরে অনেকে জ্বালাপোড়া অনুভব করে থাকে। পুরুষরা প্রস্রাবের আগে বা পরে তাদের পুরুষাঙ্গে ব্যথা অনুভব করতে পারে।
- অনেকে প্রস্রাবের বেগ অনুভব করলেও ঠিকমতো প্রস্রাব করতে পারে না।
- কারো কারো ক্ষেত্রে বারবার প্রস্রাব হতে পারে।
- অনেকসময় মূত্রাশয় পূর্ণ না হওয়া স্বত্তেও প্রস্রাবের বেগ হয় এবং প্রস্রাব ঠিকমতো হয় না।
- রাতে বেশ কয়েকবার প্রস্রাব করার প্রয়োজন হতে পারে।
- কোমরের পিছনের দিকে বা শরীরের এক পার্শ্বে ব্যথা অনুভূত হয়।
এগুলোই মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের বহুল পরিচিত লক্ষণ। তাই এই লক্ষণগুলো আপনার শরীরে দেখা দিলে অতিসত্ত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লক্ষণ জানার পাশাপাশি যে বিষয়গুলোর ফলে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, সেগুলো সম্পর্কেও জানা জরুরি। ঝুঁকির কারণসমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
ধূমপান
ধূমপান করার সময় শরীরে প্রবেশকৃত ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের কিছু অংশ ধোঁয়ার মাধ্যমে বেরিয়ে যায় আর কিছু অংশ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। সিগারেটের এই ক্ষতিকারক রাসায়নিক মূত্রাশয়ে জমা হওয়ার ফলে মূত্রাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
লিঙ্গ
ধূমপান ও কর্মক্ষেত্রে নানা রকম রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসার ফলে নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বয়স
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মূত্রাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। সাধারণত যারা এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাদের বয়স ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে।
বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক
আর্সেনিক বা রং, রাবার, চামড়া ও টেক্সটাইলে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসলে তা মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পূর্বে ক্যান্সারের কোনো চিকিৎসা হয়ে থাকলে বা পরিবারের কারো অতীতে ক্যান্সার হয়ে থাকলে
ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ, যেমন সাইক্লোফসফেমাইড এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পরিবারের কারো অতীতে মূত্রাশয়ের ক্যান্সার হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে আপনারও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যদিও এই সম্ভাবনা খুবই কম।