মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার চল্লিশোর্ধ্বদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়। ধূমপান ও মদ্যপানের আধিক্যের ফলে পুরুষদের এই ক্যান্সার সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
মাথা বা ঘাড়ের বিভিন্ন অংশ, যেমন মুখ, গলা, নাকগহ্বর, সাইনাস, লালাগ্রন্থি ও লিম্ফনোডে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার হয়ে থাকে। বেশ কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে যেগুলো এই ক্যান্সারের সংক্রমণের সম্ভাব্যতাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়-
- তামাক: এটা হতে পারে ধূমপান, সিগারেট, সিগার, পাইপ বা তামাক চিবানোর মাধ্যমে।প্রায় ৭০% থেকে ৮০% মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের জন্য এটি মূল দায়ী ঝুঁকির কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
- অ্যালকোহল: ঘনঘন, অধিক পরিমাণে ও দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপান করার ফলে মুখ ও গলার ক্যান্সার হয়।
- মারিজুয়ানা: যারা মারিজুয়ানা সেবন করে থাকে তাদের ক্ষেত্রেও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
- পান ও গুটকা: এশিয়ার অনেকেই পান ও গুটকা সেবন করে থাকে যা মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
- লিঙ্গ: নারীদের তুলনায় পুরুষদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি অধিক।
- বয়স: মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার চল্লিশোর্ধ্বদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়।
- খাদ্যাভ্যাস: উচ্চ লবণযুক্ত খাবার গ্রহণে ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অপর্যাপ্ত ফলমূল ও শাকসবজি আহারকেও ঝুঁকির কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
- বংশগতি: এই ক্যান্সারগুলো এশিয়দের মধ্যে অধিক দেখা যায়।
- দীর্ঘসময় সূর্যালোকে থাকা: যারা অনেক সময় যাবত সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকে তাদের মাথা ও ঘাড়ের অংশের ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকা: এর ফলে লালাগ্রন্থির ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি): এই ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণে। সাধারণত অনিরাপদ যৌনাচারের ফলে এই ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে থাকে।
- এপস্টেইন-বার ভাইরাস (ইবিভি): এই ভাইরাসের ফলে গ্ল্যান্ডুলার ফিভার হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
- মুখ ও দাঁতের সঠিক যত্ন না নেওয়া: মুখের যত্ন না নেওয়া এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধাণ কারণ। দাঁত পড়ে যাওয়া, মাড়ি থেকে রক্তপাত এবং দাঁতের মাড়িতে নানা রকম রোগ হলে এই ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আলগা দাঁত লাগানোর পর তা যদি মাড়ির সাথে ঠিকমতো খাপ না খায় তাহলেও তা ঝুঁকির কারণ হিসেবে ধরা হয়।
- পরিবেশ ও শিল্পকারখানা থেকে ক্ষতিকর পদার্থ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা: পরিবেশ ও শিল্পকারখানা থেকে নানারকম ক্ষতিকর পদার্থ, যেমন-অ্যাসবেসটোস, কাঠের গুঁড়ো, রং থেকে বের হওয়া ধোঁয়া এবং এরকম আরো অনেক কিছু পদার্থ আছে যেগুলো নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- গ্যাস্ট্রোএসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি) ও ল্যারিঞ্জোফ্যারিঞ্জিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (এলপিআরডি): এই রোগগুলোর কারণে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার হতে পারে।
- শরীরের দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা: আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো কারণবশত দূর্বল হয়ে পড়লে তখন ক্যান্সারের মত প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- পূর্বে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার হয়ে থাকলে: পূর্বে কোনো ব্যক্তির ক্যান্সার হয়ে থাকলে পরবর্তী জীবনে পুনরায় আরো একবার এই ক্যান্সারে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- জেনেটিক সিনড্রোম: ফ্যানকোনি অ্যানিমিয়া ও ডিসকেরাটোসিস কনজেনিটালের মতো জেনেটিক সিনড্রোমের ফলে এই ক্যান্সারে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে আসুন স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের চেষ্টা করি।
তথ্যসূত্র:
- https://www.cancer.net/cancer-types/head-and-neck-cancer/risk-factors-and-prevention
- https://www.mskcc.org/cancer-care/types/head-neck/risk-prevention-screening
- https://www.macmillan.org.uk/cancer-information-and-support/head-and-neck-cancer/causes-and-risk-factors-of-head-and-neck-cancer
- https://www.cancercouncil.com.au/head-and-neck-cancer/risk-factors-for-head-and-neck-cancers/
- https://www.cancercenter.com/cancer-types/head-and-neck-cancer/risk-factors
ছবিসূত্র:
- https://www.cancer.gov/