“ক্যান্সার” রোগটির নাম শুনলে ভয় পায়না এমন লোক পুরো পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন।কারণ রোগটি এমনই ভয়ংকর যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সারে মৃত্যু অবধারিত হতে পারে,যদি না সময় মত ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করা যায়।অতীতের চাইতে বর্তমানে,মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতিতে এবং খাদ্য গ্রহণে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
সেসাথে, আমাদের রান্নার পদ্ধতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।যেগুলো,ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি এবং বেড়ে যাবার কারণ হিসাবে উল্ল্যেখ করা যায়।যে কারনে,পূর্বের তুলনায় বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে।
এমন কোন বিশেষ কাজ নেই যে কাজ গুলো করলে কোন মানুষ একেবারে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবেন যে তিনি জীবনে কখনো আর ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন না।তবে,আমাদের কিছু দৈনন্দিন জীবনে কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস আছে যেগুলো ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হিসাবে কাজ করতে পারে।
আমরা যদি আমাদের লাইফস্টাইল সঠিক ভাবে মেইন্টেইন করতে পারি অর্থাৎ,প্রতিদিন,সঠিক সময়ে,সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার পাশাপাশি,প্রতিদিন নিয়মিত ৪৫-১ ঘন্টা ব্যায়াম,অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুম, সেসাথে যদি স্মোকিং এবং মদ্যপান পরিহার করতে পারি তবে,ক্যান্সার হবার ঝুঁকি অনেকাংশ কমানো সম্ভব।
আমাদের ত্রুটিপূর্ন জীবন যাপনের কারণে যেভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে তা নীচের তথ্য গুলোর মাধ্যমে পরিষ্কার হবে।
আমাদের বর্তমান লাইফ স্টাইলের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হল,অলস জীবন যাপনে অতিমাত্রায় অভ্যস্ততা,কায়িক পরিশ্রমের প্রতি তীব্র অনীহা এবং প্রতিটি কাজে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতা।ফলশ্রুতিতে,আমরা অধিক ওজনের সমস্যাতে ভুগছি।
এমনিতে,শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ালে দেহে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হয়।হরমোনাল ইম্ব্যালান্স, মেটাবলিজম স্লো হয়ে যাওয়া,হাড় ক্ষয়,পিত্ত থলিতে পাথর,শ্বাসকষ্ট,ডায়াবেটিস,হৃদরোগ সহ নানা ধরণের জটিলতা দেখা দেয়।
যদিও অনেক স্থুল ব্যক্তি এই সব রোগের ব্যাপারটিকে খুব স্বাভাবিক বা সামান্য ব্যাপার মনে করেন এবং তাদের ত্রুটিপূর্ন জীবন যাপন বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস কোনটিকেই বদলাতে চান না।তাদের একটু নড়ে চড়ে বসা উচিত।কারণ যেসব মানুষের ওজন,স্বাভাবিকের চাইতে বেশি তাদের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে দেহের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার যেমনঃঅন্ত্র, অন্ননালী, অগ্ন্যাশয়,বৃক্কের,পিত্ত কোষের,ওভারির,গল ব্লাডার এবং স্তন ক্যান্সার হবার ঝুঁকি অনেক গুনে বেড়ে যায়। সুতরাং,যত বেশি নিজেকে এক্টিভ রাখা যাবে ক্যান্সারকে তত বেশি দূরে রাখা সম্ভব।
এবার আমাদের দৈনিন্দন খাদ্যাভ্যাস যেভাবে আমাদের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে সে বিষয় গুলো আলোকপাত করা যাক।
বর্তমানে আমাদের খাদ্য তালিকায় আন প্রসেসড ফুডের স্থানে,জায়গা করে নিয়েছে অতিরিক্ত প্রসেসড করা ফুড।চাল থেকে শুরু করে আটা,ময়দা,কিংবা তেল বা চিনি কোনটাই বাদ নেই প্রসেসড করা থেকে।আর,এই,ধরনের খাবার গুলো খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছে আমাদের খাবার প্লেটে।অতিরিক্ত প্রসেসড ফুড গ্রহণের কারণে ইদানিং মানুষের মধ্যে প্রস্ট্রেট এবং অন্ত্রের ক্যান্সার হবার হার অনেক বেড়ে গেছে।
প্রসেসড খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের রান্নার ধরণ ও বদলে গেছে।আগের দিনে মাছ বা সবজির পাতলা ঝোলের পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন ধরণের রিচ ফুড,রেড মিট এবং ফ্রাইড ফুড আইটেম।এছাড়া,খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা শাকসবজির অপ্রতুলতা তো রয়েছেই।
আমরা হয়তো জানিনা,কিন্তু অতিরিক্ত স্বাদের জন্য সবজি,মাছ মাংস বা যেকোন খাবারকে যত বেশিক্ষণ ধরে প্যান ফ্রাই,গ্রীল্ড বা বেকড করা হয় সেই খাবার তত বেশি বিষাক্ত হয়ে যায়। যারা এই ধরণের খাবার যারা ঘন ঘন খেয়ে থাকেন তাদের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি।
এবার আসি,অভ্যাসগত কিছু অস্বাস্থ্যকর বিষয় যা নিশ্চিত ভাবে আমাদের ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।এর মধ্যে একটি হল ধূমপান এবং অপরটি হল মদ্যপান।ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন “সংবিধি বদ্ধ সতর্কীকরণের”পরও যারা ধূমপান ছাড়তে পারছেন না,তাদের উচিত নিজেকে ক্যান্সার মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা।স্বাভাবিক মানুষের তুলানায় যারা ধূমপান করেন তাদের ৯৫% লান ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা রয়েছে।একইভাবে,যারা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন তাদের ক্যান্সার বিশেষ করে লিভার ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পাশাপাশি,যারা নিয়মিত সূর্যের তাপকে অগ্রাহ্য করেন তাদের ইউভি রের কারণে স্কিন ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
সুতরাং,ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে নিজেকে বাঁচাতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা উচিত সেসাথে,সঠিক নিয়মে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া,ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার করা এবং রোদে বের হলে অবশ্যয় ছাতা,সানগ্লাস এবং স্কিনে সানব্লক ব্যবহার করা উচিত।