যদি জানতে চাওয়া হয় যে, “ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত একজনের পক্ষে কী গর্ভধারণ করা সম্ভব?” তাহলে এর উত্তরটা আসবে ‘খুব সম্ভবত না’। কারণ ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা গর্ভধারণের উপর প্রভাব ফেলে এবং এর ফলে রোগী গর্ভধারণে অক্ষম হয়ে যেতে পারে।
ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা গর্ভধারণের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে?
এই ক্যান্সার চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডিম্বাশয়, জরায়ু বা ফেলোপিয়ান টিউব কেটে ফেলতে হতে পারে। যদি এমন হয় যে, একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত হয় এবং আপনার কেবলমাত্র একটি ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার ধরা পড়েছে আর অন্যটি এখনো অক্ষত রয়েছে, তাহলে চিকিৎসকগণ শুধুমাত্র আক্রান্ত ডিম্বাশয়টি অপসারণ করে ফেলতে পারেন।
এরপর যখন কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু হবে তখন প্রয়োগকৃত ঔষধের ফলে আপনার অক্ষত ডিম্বাশয়টিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে এবং এই কারণে আপনার পক্ষে হয়তো গর্ভধারণ করা আর সম্ভবপর হয়ে উঠবে না।
সার্জারি
সার্জারি, যেমন হিসটেরেক্টমি ও ওফোরেক্টমির কারণে আপনার গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হিসটেরেক্টমির মাধ্যমে জরায়ু অপসারণ করা হয় এবং ওফোরেক্টমির মাধ্যমে দুটো ডিম্বাশয়ই অপসারণ করা হয়।
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি দেওয়ার ফলে অনেক আগেই মেনোপজ হয়, গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বা ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন বা ডিম্বাণু নিঃসরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
রেডিওথেরাপি
রেডিওথেরাপি দেওয়ার ফলে ডিম্বাশয়ে জমা হওয়া ডিম্বাণুগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং জরায়ুতে ক্ষতের সৃষ্টি হয় বা অনেকসময় জরায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
হরমোন থেরাপি
হরমোন থেরাপিতে ব্যবহৃত ঔষধের কারণে আপনি আজীবনের জন্য সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে পড়তে পারেন।
টার্গেটেড ক্যান্সার ঔষধ ও ইমিউনোথেরাপি
কিছু টার্গেটেড ক্যান্সার ঔষধ ও ইমিউনোথেরাপিতে ব্যবহৃত ঔষধ ডিম্বাশয়কে পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলতে পারে।
চিকিৎসা শুরুর আগে গর্ভধারণের বিষয় নিয়ে চিকিৎসকদের সাথে অবশ্যই আলোচনা করে নিতে হবে। গর্ভধারণ একজন নারীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং চিকিৎসা শুরুর পূর্বেই গর্ভধারণের এই সম্ভাব্য দিকগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে চিকিৎসা পরবর্তী মানসিক চাপ ও কষ্টের সাথে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা হলেও সহজ হবে।
কিন্তু অনেকক্ষেত্রে খুব জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরুর প্রয়োজন হলে, চিকিৎসকের সাথে রোগীর এই আলোচনাটুকু করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। এমন অবস্থায় চিকিৎসার দিকে গুরুত্ব দেওয়াটা অধিক প্রয়োজন হয়ে পড়ে এবং এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়াটাও পরবর্তীতে একজনের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।
চিকিৎসার পরে প্রকৃতিগত কারণে আপনার পক্ষে গর্ভবতী হওয়া সম্ভব হবে না হয়তো কিন্তু সন্তান লাভের জন্য অন্য কিছু উপায় রয়েছে।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন(আইভিএফ)
যদি আপনার জরায়ু অপসারণ করা না হয় তাহলে আপনি ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের কথা ভেবে দেখতে পারেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনার চিকিৎসক আপনার থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে সেগুলোকে শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত করবে এবং পরবর্তীতে তা আপনার জরায়ুতে স্থানান্তরিত করা হবে।
সারোগেসি
সারোগেসি ব্যাপারটা হচ্ছে অনেকটা এরকম আপনি যদি সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য কারো গর্ভে আপনার সন্তান বেড়ে উঠবে।
দত্তক
আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি অন্য কোন একজনের সন্তানের দায়িত্ব আজীবনের নেবেন এবং তার বায়োলজিক্যাল বাবা-মা আর কোনোভাবেই এই সন্তানের উপর আর অধিকার খাটাতে পারবে না।
ফস্টারিং
ফস্টারিং প্যারেন্টিং বিষয়টি হচ্ছে অনেকটা এমন যে একজন বাচ্চার বায়োলজিক্যাল বাবা-মায়ের কাছেই সে বড় হবে কিন্তু সেই বাচ্চাকে বাবা-মায়ের স্নেহ ও সকল রকমের সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধা আপনি প্রদান করতে পারবেন। কোনো রক্তের সম্পর্ক বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই আপনি এটি করতে পারবেন।
তথ্যসূত্র:
https://targetovariancancer.org.uk/about-ovarian-cancer/your-situation/im-younger-woman-diagnosis/fertility-younger-women-diagnosis#:~:text=Your%20treatment%20and%20fertility&text=If%20the%20cancer%20is%20diagnosed,a%20child%20in%20the%20future.
https://www.webmd.com/ovarian-cancer/ovarian-cancer-and-fertility-loss
https://ovarian.org.uk/ovarian-cancer/patient-hub/advice-younger-women/ovarian-cancer-and-your-fertility/
https://ivi-fertility.com/blog/possible-get-pregnant-ovarian-cancer/
https://www.juanacrespo.es/en/pregnancy-and-ovarian-cancer/
ছবিসূত্র:
https://inceptavaccine.com