প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৪, ২১ :০৯

ক্যান্সার রোগীরা কী রমজান মাসে রোজা রাখতে পারবে?

“আমি কী রোজা রাখতে পারি?” রমজান মাসে ক্যান্সার রোগীরা এই ব্যাপারটি নিয়ে দ্বিধান্বিত থাকেন। যেহেতু প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর সমস্যা ভিন্ন, তাই এই প্রশ্নটির উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’, অর্থাৎ ঠিক এককথায় দেওয়া যায় না। প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর সমস্যা এবং চিকিৎসা আলাদা আলাদা। একজন ক্যান্সার রোগীর রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাই বিভিন্ন ধরণের শর্তাবলী ও বিধিনিষেধ থাকে।

অস্ট্রেলিয়ার এডিলেডে অবস্থিত লাইল ম্যাকউইন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং ফেডারেশন অফ বাংলাদেশি মেডিকেল সোসাইটিস ইন অস্ট্রেলিয়া-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ আহমেদুল্লাহ বলেন, ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে রোজা রাখাটা ভালো। এর ফলে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুটা হ্রাস পেতে পারে এবং ক্যান্সারের প্রগতিকেও কমিয়ে দিতে পারে।

বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা যায় যে একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে খাবার গ্রহণ করে  রোজা করার ফলে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধক একটা প্রভাব তৈরি হয়। যেসব ক্যান্সার রোগী অপুষ্টিতে ও ক্যান্সার ক্যাচেক্সিয়ায় (একটি জটিল বিপাকীয় সিন্ড্রোম) ভুগছে তাদের রোজা রাখা যাবে না। ক্যান্সার রোগীদের অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় পান করতে হবে এবং উষ্ণ পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ক্যান্সার রোগীদের স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, ডিম ও দুগ্ধজাতীয় খাবার খেতে হবে। লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার তাদের এড়িয়ে চলতে হবে।  

রমজানের আগে, যেসব ক্যান্সার রোগী রোজা রাখতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিতে হবে যে তিনি রোজা করতে পারবেন কিনা। একজন রোগীর অবশ্যই প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ জেনে নিতে হবে যাতে কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে তিনি যেনো সচেতন হতে পারেন।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, একজন রোগী রোজা করতে গিয়ে যদি অসুস্থ বোধ করে তাহলে তার রোজা না করাই ভালো।

  • কেমোথেরাপি
  • যেসব রোগী কেমোথেরাপি নিচ্ছে তারা রোজা রাখতে পারবে না। কেমোথেরাপি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়। ইন্ট্রাভেনাস অর্থাৎ রক্তের শিরার মাধ্যমে শরীরে কোনো কিছু গ্রহণ করলে ইসলামের আইন অনুযায়ী তা রোজার শর্ত ভঙ্গ করে।

  • সাবকিউটেনিয়াসলি (চামড়ার নীচে) বা ইন্ট্রামাসকুলারলি (পেশীর নীচে) বায়োলজিক্যাল বা হরমোনাল চিকিৎসা
  • যেসব ক্যান্সার রোগী সাবকিউটেনিয়াসলি বা ইন্ট্রামাসকুলারলি যেকোনো ধরনের বায়োলজিক্যাল বা হরমোনাল চিকিৎসা গ্রহণ করাকালীন রোজা রাখতে পারবে। এই বিষয়ে ইসলামে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

  • ঔষধ সেবন
  • ঔষধ সেবনকারী ক্যান্সার রোগী ইচ্ছে করলে রোজা রাখতে পারবে। যদি কোনো রোগী দিনে দুইবার ঔষধ সেবন করে থাকে তাহলে তারা ইফতারি ও সেহরীতে দুইবেলার ঔষধ সেবন করতে পারে। কিন্তু ঔষধ সেবন করার ক্ষেত্রে খাওয়ার আগে ও পরের ঔষধ খাওয়ার ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

  • রেডিয়েশন থেরাপি
  • এটি দুধরণের হতে পারে; শর্ট কোর্স (যেমন-কয়েক দিন) এবং লং কোর্স (যেমন-কয়েক সপ্তাহ)। শর্ট কোর্স চলাকালীন একজন ক্যান্সার রোগী রোজা করতে পারবে কিন্তু লং কোর্সের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে কেবলমাত্র প্রথম ১-২ সপ্তাহই রোজা রাখতে পারবে। রোজা রাখার ফলে লং কোর্সের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকগণ লং কোর্স চলাকালীন রোজা রাখার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে থাকেন।

  • সার্জারি
  • সার্জারির পরে, রোগীদেরকে সাধারণত রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয় কারণ অনেকসময় ইন্ট্রাভেনাসলি ঔষধ প্রদান করা হয়। মাঝেমাঝে, সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য বা সার্জারি পরবর্তী প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের প্রয়োজন হয়।


    Fighting Cancer Desk
    ফাইটিং ক্যান্সার ডেস্ক