ক্যান্সার রোগ বলতে সাধারণত অনেকগুলো জটিল রোগের সমষ্টি বুঝানো হয়। অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের সমন্বয়ে গঠিত মানবদেহে অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন থেকে এ মরণঘাতী ব্যাধির উৎপত্তি হয় বলে ধারণা করা হয়। হঠাৎ করেই কোনো এক ধরনের কোষে এ ধরনের বিভাজনের কারণ এখনো স্পষ্ট না হলেও বিশ্বজুড়ে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকরা।
ক্যান্সার চিকিৎসা দীর্ঘদিনের একটি যাত্রা হওয়ায় এর চিহ্নিত হওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া, আশপাশের পরিবেশ ও মানুষের যথাযথ যত্ন ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সদ্য ক্যান্সার চিহ্নিত হওয়া রোগীদের জন্য উপকারী তথ্য ও উপদেশ দিয়ে সাহায্য করে থাকেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ দীর্ঘদিন এ ব্যাধির সাথে লড়ে আসা যোদ্ধারা। তারই কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
১. প্রথমেই ক্যান্সার আক্রান্তদের পরিসংখ্যান দেখে আশাহত হওয়া যাবে না। প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন কারণ কাজ করে এবং শরীর ও ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী আলাদা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে থাকে। অন্য কারো অভিজ্ঞতা বা চিকিৎসার তথ্য শুনে নিজের সাথে তুলনা না করে, বরং নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করা উচিত।
২. অনেকেই নিজের ক্যান্সারের ধরন ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। এই আগ্রহকে চিকিৎসকরা ইতিবাচক বলেছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তথ্য কি়ংবা ভুল তথ্য থেকে কেউ যাতে দ্বিধায় পড়ে না যায় তাই নিজের চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নিতে হবে। মনগড়া কোনো ব্যাখ্যা মাথায় না রেখে যেকোনো বিষয়ে সঠিক ধারণা নিতে চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করা উচিত এবং নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পরামর্শগুলো কোথাও লিখে রাখলে প্রয়োজনে সেগুলো বারবার দেখে নেয়া যাবে।
৩. ইতিবাচক চিন্তা এবং জীবনযাপন যেকোনো রোগের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ক্যান্সারের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় তা আরো বেশি ভূমিকা রাখে। নিয়ম করে শুধুমাত্র চিকিৎসা অনুসরণ করাই যথেষ্ট না, বরং নিজস্ব পছন্দ, শখ ও আনন্দের উৎসগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। মানসিক চাপ কমানোর জন্য এটি আবশ্যক, তা নাহলে চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে খাপ খাইয়ে জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মন ভালো রাখা ও আত্মিক প্রশান্তির জন্য নিজের ভালোলাগার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
৪. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত। প্রয়োজন ও পরামর্শ মতো ব্যায়াম করাও গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলেই চিকিৎসার ধকল সামলানো সহজ হয়ে ওঠে।
৫. নিজেকে এ যাত্রায় কখনোই একা মনে করা যাবে না। যাদের সাথে নিজস্ব চিন্তাধারা মিলে ও সময় কাটাতে ভালো লাগে, সেই কাছের মানুষদের কাছে যেকোনো অসুবিধা ও অশান্তির কথা খুলে বললে মানসিকভাবে যেমন হালকা হওয়া যায়, কখনো কখনো সমাধানের পথও বের করা সম্ভব। নিজের আবেগ, অনুভূতিগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে, প্রয়োজনে তা প্রকাশ করে মনের ভার কমাতে হবে। অনেকে মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
৬. প্রতিবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় পরিবার বা কাছের কাউকে অবশ্যই সাথে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ছোট ছোট বিষয় থেকে অধিকাংশ সময়ই মানসিকভাবে দুর্বল হতে থাকে রোগীরা। তাই এ বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
ক্যান্সারের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সমানভাবে যত্ন নেয়া প্রয়োজন। তার জন্য ক্যান্সার চিহ্নিত হওয়ার পর থেকেই প্রাথমিক কিছু পরামর্শ মেনে চলা উচিত।